ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলো : ফিরে দেখা ৮ জুলাই

কোটা বৈষম্যের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক দল, যা পরে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এ দিনটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সেদিনই শিক্ষার্থীরা আবারও সরকারের কাছে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ভয়ের আবছা রাতগুলো ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল ভোরের দিকে—কিন্তু কে জানত, সেই ভোর ধরা দেবে রক্তাক্ত সূর্যের হাত ধরে! জুলাই সংগ্রামীদের মনে তখন একটাই প্রত্যাশা—ভোর আসুক, প্রয়োজনে রক্তের নদী পেরিয়ে আসুক, তবুও আসুক। এই অদম্য মনোবল নিয়ে শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দ্বিতীয় দিনের মতো দৃপ্ত পায়ে পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি।

প্রথম দিনের সাফল্য এবং প্রতিবাদের উচ্ছ্বাসকে শক্তি করে ৮ জুলাই দ্বিগুণ উদ্দীপনায় রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু হয়। তারপর মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা, আর নীলক্ষেত অবরোধ করেন ইডেন কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীরা। এভাবে রাজধানীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’, পরিণত হয় এক ঐতিহাসিক ছাত্র-আন্দোলনে।

এভাবেই ঢাকার ১১টি স্থানে সড়ক অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে কার্যত অচল করে ফেলা হয় রাজধানী ও আশপাশের এলাকাগুলো

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল কারওয়ান বাজারে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু সেই বাধা উপেক্ষা করে বিকেল ৫টার দিকে তারা অবরোধ গড়ে তোলেন ফার্মগেটে। ততক্ষণে মিছিল ফুলেফেঁপে আরও বড় হয়, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রাত ৮টার পর আন্দোলনকারীরা ফার্মগেট থেকে ফিরে আসেন শাহবাগে এবং সেখান থেকেই ঘোষণা করা হয় পরদিনের নতুন কর্মসূচি।

৮ জুলাই সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ঘোষণা আসে আগামী তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি, সারা দেশে গণসংযোগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম জানান, মঙ্গলবার অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমে সর্বাত্মক ব্লকেডের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার থেকে শুরু হবে পূর্ণমাত্রার অবরোধ।

একদিকে চলতে থাকে সড়ক অবরোধ, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন গড়ে তুলতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি, যা জুলাই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলো : ফিরে দেখা ৮ জুলাই

আপলোড সময় : ০৪:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

কোটা বৈষম্যের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ২০২৪ সালের ৮ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক দল, যা পরে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এ দিনটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সেদিনই শিক্ষার্থীরা আবারও সরকারের কাছে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ভয়ের আবছা রাতগুলো ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল ভোরের দিকে—কিন্তু কে জানত, সেই ভোর ধরা দেবে রক্তাক্ত সূর্যের হাত ধরে! জুলাই সংগ্রামীদের মনে তখন একটাই প্রত্যাশা—ভোর আসুক, প্রয়োজনে রক্তের নদী পেরিয়ে আসুক, তবুও আসুক। এই অদম্য মনোবল নিয়ে শাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দ্বিতীয় দিনের মতো দৃপ্ত পায়ে পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি।

প্রথম দিনের সাফল্য এবং প্রতিবাদের উচ্ছ্বাসকে শক্তি করে ৮ জুলাই দ্বিগুণ উদ্দীপনায় রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু হয়। তারপর মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা, আর নীলক্ষেত অবরোধ করেন ইডেন কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীরা। এভাবে রাজধানীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’, পরিণত হয় এক ঐতিহাসিক ছাত্র-আন্দোলনে।

এভাবেই ঢাকার ১১টি স্থানে সড়ক অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে কার্যত অচল করে ফেলা হয় রাজধানী ও আশপাশের এলাকাগুলো

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল কারওয়ান বাজারে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু সেই বাধা উপেক্ষা করে বিকেল ৫টার দিকে তারা অবরোধ গড়ে তোলেন ফার্মগেটে। ততক্ষণে মিছিল ফুলেফেঁপে আরও বড় হয়, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রাত ৮টার পর আন্দোলনকারীরা ফার্মগেট থেকে ফিরে আসেন শাহবাগে এবং সেখান থেকেই ঘোষণা করা হয় পরদিনের নতুন কর্মসূচি।

৮ জুলাই সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ঘোষণা আসে আগামী তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি, সারা দেশে গণসংযোগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের। আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম জানান, মঙ্গলবার অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমে সর্বাত্মক ব্লকেডের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার থেকে শুরু হবে পূর্ণমাত্রার অবরোধ।

একদিকে চলতে থাকে সড়ক অবরোধ, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন গড়ে তুলতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে গঠিত হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি, যা জুলাই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে।