ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

কুড়িগ্রামের একটি গ্রামে ছয় শতাধিক মৌচাক

গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে মৌচাক

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি গ্রামে ছয় শতাধিক মৌচাক রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের চারদিকের কার্নিশ, জানালার সানশেড, বারান্দাসহ ভবনের চারপাশের গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য মৌমাছির চাক। বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন অংশে বসেছে ছোট-বড় ৬০টি মৌচাক। বিদ্যালয়ের সামনে ছোট-বড় কয়েকটি শিমুল, কাঁঠাল, আম, নারিকেল গাছে বসেছে শতাধিক মৌচাক। এসব গাছের কোনো কোনোটা রয়েছে ভবন ঘেঁষে। মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পথচারীরাও মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছে।
স্থানীয় এবং বিদ্যালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন মৌমাছি কোনো না কোনো মানুষকে তাড়া করে এবং হুল ফুটায়। এই কারণে সবাই আতঙ্কে থাকেন। শুধু বিদ্যালয়ে নয়, চৌদ্দঘড়ি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও বসেছে একাধিক চাক। এতে করে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক মৌচাক বসেছে ওই গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল, জয়নালসহ অনেকেই জানান, চরাঞ্চলে এই সময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এখানে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশপাশে বন-জঙ্গল না থাকায় এই বিদ্যালয় এবং পাশের গাছ-গাছালিতে মৌচাক তৈরি তারা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলে, অসংখ্য মৌমাছি সবসময় ওড়াওড়ি করে। এসব মৌমাছি অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করেছে।
স্কুলটির পিয়ন সোহেল রানা জানান, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে স্কুলের ক্লাস রুম খুলে দিয়ে অফিসের জানালা-দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকি। স্কুলের বারান্দা এবং অফিসের সঙ্গেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ মৌচাক বসেছে।
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এবার সরিষার চাষ বেশি হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু স্কুলেই নয়, আশপাশের অনেক বাড়িতেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতেও ছয়টি চাক দিয়েছে।
সব মিলে আমাদের এলাকায় প্রায় ৬শ’ মৌচাক রয়েছে। এসব চাক থেকে স্থানীয়রা মধু সংগ্রহ করলেও ক্ষতির পরিমানটাই বেশি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছি আসছে। অনেকেই মধু সংগ্রহ করতে কৃত্রিম মৌচাক বসিয়েছেন। অনেক স্থানে মৌমাছি নিরাপদ স্থান ভেবে চাক বসাচ্ছে। সরিষার আবাদ ভালো হওয়ায় চাকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে স্থানীয়রা বিক্রি করেন, যা জেলার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

কুড়িগ্রামের একটি গ্রামে ছয় শতাধিক মৌচাক

আপলোড সময় : ০১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৩

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি গ্রামে ছয় শতাধিক মৌচাক রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের চারদিকের কার্নিশ, জানালার সানশেড, বারান্দাসহ ভবনের চারপাশের গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য মৌমাছির চাক। বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন অংশে বসেছে ছোট-বড় ৬০টি মৌচাক। বিদ্যালয়ের সামনে ছোট-বড় কয়েকটি শিমুল, কাঁঠাল, আম, নারিকেল গাছে বসেছে শতাধিক মৌচাক। এসব গাছের কোনো কোনোটা রয়েছে ভবন ঘেঁষে। মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পথচারীরাও মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছে।
স্থানীয় এবং বিদ্যালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন মৌমাছি কোনো না কোনো মানুষকে তাড়া করে এবং হুল ফুটায়। এই কারণে সবাই আতঙ্কে থাকেন। শুধু বিদ্যালয়ে নয়, চৌদ্দঘড়ি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও বসেছে একাধিক চাক। এতে করে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক মৌচাক বসেছে ওই গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল, জয়নালসহ অনেকেই জানান, চরাঞ্চলে এই সময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এখানে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশপাশে বন-জঙ্গল না থাকায় এই বিদ্যালয় এবং পাশের গাছ-গাছালিতে মৌচাক তৈরি তারা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলে, অসংখ্য মৌমাছি সবসময় ওড়াওড়ি করে। এসব মৌমাছি অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করেছে।
স্কুলটির পিয়ন সোহেল রানা জানান, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে স্কুলের ক্লাস রুম খুলে দিয়ে অফিসের জানালা-দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকি। স্কুলের বারান্দা এবং অফিসের সঙ্গেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ মৌচাক বসেছে।
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এবার সরিষার চাষ বেশি হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু স্কুলেই নয়, আশপাশের অনেক বাড়িতেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতেও ছয়টি চাক দিয়েছে।
সব মিলে আমাদের এলাকায় প্রায় ৬শ’ মৌচাক রয়েছে। এসব চাক থেকে স্থানীয়রা মধু সংগ্রহ করলেও ক্ষতির পরিমানটাই বেশি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছি আসছে। অনেকেই মধু সংগ্রহ করতে কৃত্রিম মৌচাক বসিয়েছেন। অনেক স্থানে মৌমাছি নিরাপদ স্থান ভেবে চাক বসাচ্ছে। সরিষার আবাদ ভালো হওয়ায় চাকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে স্থানীয়রা বিক্রি করেন, যা জেলার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।