আদালতের আদেশে স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছেন রংপুরের বদরগঞ্জের যুবক শ্যাম সুন্দর রায়। স্ত্রী হেমা শর্মা বিয়ের পরদিন থেকে তার মা ও মামাদের কাছে বন্দি ছিলেন।
রোববার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতে শ্যাম সুন্দরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্বাস উদ্দিন।
এর আগে, গত ৩১ অক্টোবর রিটের শুনানি শেষ হয়। শুনানিতে হেমা শর্মাকে আদালতে হাজির করতে তার মা সামিত্রী রায়, মামা গণেশ শর্মা ও নারায়ণ শর্মাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্দেশ অনুসারে হেমা শর্মাকে নিয়ে আদালতে হাজির হন তার মা ও মামারা।
পুলিশ পাহারায় হেমা শর্মাকে আদালতে হাজির করা হয়। হেমা শর্মা আদালতকে জানান, আমি প্রাপ্তবয়স্ক নারী। শ্যাম সুন্দর রায়কে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই।
আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, হেমা ও শ্যামের দাম্পত্য জীবন ফিরে পাওয়ার লড়াইটা ব্যতিক্রম ছিল। গত ১৩ জানুয়ারি তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়েতে শ্যামের পরিবার সম্মত থাকলেও বাবাহীন হেমার মা ও মামারা এ বিয়ে মেনে নেয়নি। তারা বিয়ের পরের দিনই হেমাকে পুলিশের সহায়তায় তুলে নেয়। পরে মামা গণেশের বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে। হেমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঢাকায় এনে পাঁচ মাস বন্দি করে রাখা হয়। হেমাকে দিয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করানো হয়। পরে শ্যাম স্ত্রীকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশে পুলিশ পাহারায় হেমাকে আদালতে হাজির করা হয়।
তিনি বলেন, হেমা আদালতের কাছে শ্যামকে বিয়ে ও মামাদের অত্যাচারের বিষয়টি জানান। তিনি স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে বলেও আদালতকে জানান হেমা। এ সময় আদালত হেমার মা, মামা, শ্যাম ও শ্যামের বাবার বক্তব্য সরাসরি শুনতে চান। সবকিছু শুনে হাইকোর্টের বিচারপতিরা আদালত থেকেই হেমাকে তার স্বামী শ্যামের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
জানা যায়, ভালোবেসে হেমা শর্মাকে বিয়ে করেন রংপুরের বদরগঞ্জের যুবক শ্যাম সুন্দর রায়। বিয়েতে মেয়ের পরিবারের সম্মতি ছিল না। পরে তারা উভয়ে মিলে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করেন। এরপর ঘরোয়াভাবেই সেরেছেন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। বিয়ের পরদিনই পুলিশ ও স্ত্রীর পরিবারের লোকজন হাজির হন শ্যামের বাড়িতে। ‘পাত্রীর বয়স ১৮ বছরের কম’ এমন কারণ দেখিয়ে মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেন অভিবাবকরা। ওই দিনের পর স্ত্রীর সঙ্গে আর দেখা কিংবা কথা বলতে পারছিলেন না শ্যাম সুন্দর।