ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

সিরাজগঞ্জ চরাঞ্চলের পতিত বালিয়াড়িতে লাল সোনার আবাদ

সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের পতিত বালিয়াড়িতে “লাল সোনার” আবাদ হচ্ছে। আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। দূর থেকে মনে হয় দুর্গম চরের বালিয়াড়ি লাল সবুজের চাদরে ঢাকা পড়েছে। কোথাও এক চিলতে জায়গা পতিত নেই। চৈতালী নানা ফসলের সাথে চরের নতুন পলিমাটিতে চাষ লাল সোনা খ্যাত মরিচের। বিস্তীর্ণ জমিতে চোখ রাঙাচ্ছে লাল মরিচ।

যমুনা নদীর প্রায় প্রতিটি চরের বালুময় মাঠ এখন ঢেকে আছে সবুজের চাদরে, আর এই চাদরের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে লাল, সবুজ আর কালচে রঙের মরিচ। প্রতিদিন শত শত মণ মরিচ উত্তোলন ও বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষাণ-কৃষাণীর। এ মৌসুমে ব্যাপক ফলন হলেও কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কম, ফলে জমি থেকে উত্তোলিত কাঁচা মরিচ বিক্রির পাশাপাশি শুকিয়ে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এ অঞ্চলের উৎপাদিত মরিচ আকারে বড়, পুষ্ট ও রঙ ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। যমুনার চরাঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীদের হাত ঘুরে প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে এবার মরিচের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা। এক সময়ের ধুধু বালিয়াড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় মরিচের ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকেরা। মরিচ আবাদে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে উৎপাদন হচ্ছে ১২ মণ মরিচ। বাজারে দাম এবার কিছুটা কম থাকায় কাঁচা বিক্রির পাশাপাশি মরিচ শুকানোর দিকে ঝুঁকছে কৃষকেরা।

নাটুয়াপাড়ার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ২০ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। আরও চার মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছি। এখন যদি শুকনো মরিচ বিক্রি করি তাহলে প্রায় ১ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি।

চরাঞ্চলে স্থানীয় জাতের মরিচ আবাদ করে উৎপাদন খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান যমুনার চরের কৃষকরা। চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি জমিতে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি আনছার আলী জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। কাঁচা মরিচ বিক্রি করেও চার মণ শুকনো মরিচ রেখেছেন। তার এই ১ বিঘা মরিচ খেতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। শুকনো মরিচ বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি। বর্তমান বাজারে চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান এই মরিচ চাষি।

স্থানীয় বাজার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ মণভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া হাট বসে। এই হাট থেকে দেশের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ব্যাপারীরা মরিচ কিনে নিয়ে যান। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে মরিচ কিনে চরের তপ্ত বালুর ওপর শুকিয়ে নিয়ে যান। এ বছর চরের কৃষকরা মরিচ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আ জ ম আহসান শহীদ সরকার বললেন, চরাঞ্চলে মরিচ আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নানা সহযোগিতা করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ, যার ফলে বাড়ছে মরিচের উৎপাদন। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে এক হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, কাঁচা মরিচের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ১১২ মেট্রিক টন। গত বছর মরিচ উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সিরাজগঞ্জ চরাঞ্চলের পতিত বালিয়াড়িতে লাল সোনার আবাদ

আপলোড সময় : ১২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের পতিত বালিয়াড়িতে “লাল সোনার” আবাদ হচ্ছে। আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। দূর থেকে মনে হয় দুর্গম চরের বালিয়াড়ি লাল সবুজের চাদরে ঢাকা পড়েছে। কোথাও এক চিলতে জায়গা পতিত নেই। চৈতালী নানা ফসলের সাথে চরের নতুন পলিমাটিতে চাষ লাল সোনা খ্যাত মরিচের। বিস্তীর্ণ জমিতে চোখ রাঙাচ্ছে লাল মরিচ।

যমুনা নদীর প্রায় প্রতিটি চরের বালুময় মাঠ এখন ঢেকে আছে সবুজের চাদরে, আর এই চাদরের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে লাল, সবুজ আর কালচে রঙের মরিচ। প্রতিদিন শত শত মণ মরিচ উত্তোলন ও বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষাণ-কৃষাণীর। এ মৌসুমে ব্যাপক ফলন হলেও কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কম, ফলে জমি থেকে উত্তোলিত কাঁচা মরিচ বিক্রির পাশাপাশি শুকিয়ে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এ অঞ্চলের উৎপাদিত মরিচ আকারে বড়, পুষ্ট ও রঙ ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। যমুনার চরাঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীদের হাত ঘুরে প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে এবার মরিচের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকেরা। এক সময়ের ধুধু বালিয়াড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় মরিচের ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকেরা। মরিচ আবাদে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে উৎপাদন হচ্ছে ১২ মণ মরিচ। বাজারে দাম এবার কিছুটা কম থাকায় কাঁচা বিক্রির পাশাপাশি মরিচ শুকানোর দিকে ঝুঁকছে কৃষকেরা।

নাটুয়াপাড়ার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ২০ মণ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। আরও চার মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছি। এখন যদি শুকনো মরিচ বিক্রি করি তাহলে প্রায় ১ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি।

চরাঞ্চলে স্থানীয় জাতের মরিচ আবাদ করে উৎপাদন খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান যমুনার চরের কৃষকরা। চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি জমিতে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে উৎপাদিত মরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি আনছার আলী জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। কাঁচা মরিচ বিক্রি করেও চার মণ শুকনো মরিচ রেখেছেন। তার এই ১ বিঘা মরিচ খেতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। শুকনো মরিচ বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি। বর্তমান বাজারে চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান এই মরিচ চাষি।

স্থানীয় বাজার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ মণভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যমুনার চরে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার কাজিপুরের নাটুয়াপাড়া হাট বসে। এই হাট থেকে দেশের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ব্যাপারীরা মরিচ কিনে নিয়ে যান। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে মরিচ কিনে চরের তপ্ত বালুর ওপর শুকিয়ে নিয়ে যান। এ বছর চরের কৃষকরা মরিচ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আ জ ম আহসান শহীদ সরকার বললেন, চরাঞ্চলে মরিচ আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নানা সহযোগিতা করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ, যার ফলে বাড়ছে মরিচের উৎপাদন। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে এক হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, কাঁচা মরিচের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ১১২ মেট্রিক টন। গত বছর মরিচ উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন।