ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রামে মোগল স্থাপত্যরীতির এক মসজিদ

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ইসলামগাঁথী তিন গম্বুজ মসজিদ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসলামগাঁথী গ্রামে আত্রাই নদের তীরে অবস্থিত মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। মসজিদের পাশেই আছে কারুকার্যখচিত একটি মঠ। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাচীন এই স্থাপনা দুটি অনেকটা দৃষ্টির আড়ালে পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে স্থাপনা দুটি।

পুরোনো এই মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। মসজিদটি ঠিক কত সালে বা কে নির্মাণ করেছিলেন, এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নওগাঁ জেলা তথ্য বাতায়ন ও আত্রাই উপজেলা তথ্য বাতায়নেও এই মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, মসজিদ সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে নির্মিত। সুবেদার ইসলাম খানের আমলে (১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সাল) মসজিদটি স্থাপন করা হয় বলে ধারণা পাওয়া যায়। মসজিদের পাশে অবস্থিত মঠটিও একই সময়ে নির্মাণ করা হয়। লোকশ্রুতি আছে, এই মসজিদ ও মঠটি এক রাতেই জিনেরা নির্মাণ করেন। এ জন্য মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে জিনের মসজিদ নামে পরিচিত।

মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর স্থাপত্যশৈলী মধ্যযুগীয় অন্য সব স্থাপনার মতোই। মসজিদের মূল ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বায় ১৭ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ৪ হাত। ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি মসজিদের দেয়াল প্রায় এক ফুট পুরু। মসজিদের সম্মুখভাগে আছে একটি দরজা। ছাদের ওপর একই সারিতে আছে তিনটি গম্বুজ। তিনটি গম্বুজের আকৃতি একই সমান। দুই কাতারে মসজিদটিতে একসঙ্গে ১৬ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। পরে ১৯৮০ সালের দিকে মসজিদের পূর্ব দিকে নতুন আরেকটি মসজিদ ভবন তৈরি করেন স্থানীয়রা। নতুন এই মসজিদে শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

ইসলামগাঁথী গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমার তো দূরের কথা, আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এই মসজিদ ও মঠ কবেকার।

১০ বছরের বেশি সময় মসজিদটিতে ইমামতি করেন আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এখানে নামাজ আদায় করেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও আত্রাই কলকাকলী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘শুনতেছি মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য নাকি মসজিদ ও মঠ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ মসজিদ ও মঠ ভেঙে না ফেলে বরং এই স্থাপনা দুটি সংরক্ষণে প্রশাসনের ভূমিকা নেওয়া উচিত। যেহেতু ইসলামে মসজিদ স্থানান্তরের বিধান আছে, তাই প্রয়োজনে অন্যত্র নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রামে মোগল স্থাপত্যরীতির এক মসজিদ

আপলোড সময় : ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ইসলামগাঁথী তিন গম্বুজ মসজিদ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসলামগাঁথী গ্রামে আত্রাই নদের তীরে অবস্থিত মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। মসজিদের পাশেই আছে কারুকার্যখচিত একটি মঠ। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাচীন এই স্থাপনা দুটি অনেকটা দৃষ্টির আড়ালে পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে স্থাপনা দুটি।

পুরোনো এই মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। মসজিদটি ঠিক কত সালে বা কে নির্মাণ করেছিলেন, এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নওগাঁ জেলা তথ্য বাতায়ন ও আত্রাই উপজেলা তথ্য বাতায়নেও এই মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।

বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, মসজিদ সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে নির্মিত। সুবেদার ইসলাম খানের আমলে (১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সাল) মসজিদটি স্থাপন করা হয় বলে ধারণা পাওয়া যায়। মসজিদের পাশে অবস্থিত মঠটিও একই সময়ে নির্মাণ করা হয়। লোকশ্রুতি আছে, এই মসজিদ ও মঠটি এক রাতেই জিনেরা নির্মাণ করেন। এ জন্য মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে জিনের মসজিদ নামে পরিচিত।

মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর স্থাপত্যশৈলী মধ্যযুগীয় অন্য সব স্থাপনার মতোই। মসজিদের মূল ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বায় ১৭ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ৪ হাত। ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি মসজিদের দেয়াল প্রায় এক ফুট পুরু। মসজিদের সম্মুখভাগে আছে একটি দরজা। ছাদের ওপর একই সারিতে আছে তিনটি গম্বুজ। তিনটি গম্বুজের আকৃতি একই সমান। দুই কাতারে মসজিদটিতে একসঙ্গে ১৬ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। পরে ১৯৮০ সালের দিকে মসজিদের পূর্ব দিকে নতুন আরেকটি মসজিদ ভবন তৈরি করেন স্থানীয়রা। নতুন এই মসজিদে শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

ইসলামগাঁথী গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমার তো দূরের কথা, আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এই মসজিদ ও মঠ কবেকার।

১০ বছরের বেশি সময় মসজিদটিতে ইমামতি করেন আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এখানে নামাজ আদায় করেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও আত্রাই কলকাকলী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘শুনতেছি মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য নাকি মসজিদ ও মঠ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ মসজিদ ও মঠ ভেঙে না ফেলে বরং এই স্থাপনা দুটি সংরক্ষণে প্রশাসনের ভূমিকা নেওয়া উচিত। যেহেতু ইসলামে মসজিদ স্থানান্তরের বিধান আছে, তাই প্রয়োজনে অন্যত্র নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে।