ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

চাকরি হারাচ্ছেন ৩৯ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী

জুলাই অভ্যুত্থানে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, ছাত্রজনতার সঙ্গে মারামারিতে জড়িত থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিভঙ্গ করে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগে ৩৯ চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারাচ্ছেন। একই অভিযোগে আরও ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মচারীকে তিরস্কার করে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯৬ কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণ এবং ২২ কর্মচারীর পদোন্নতি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ এর ৮(ক)(২) ধারায় গঠিত কমিটির আংশিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন হয়।

অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটি সুপারিশে উল্লেখ করেন অভিযুক্ত ১৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫ এর (ঘ, ঝ, ট) ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই অধ্যাদেশের ৬ (ঠ) অনুযায়ী চাকরি হতে পদচ্যুতি (ডিসমিসাল) করার সুপারিশ করা হলো। এছাড়া ২৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৯ জনের বিষয়ে কমিটি উল্লেখ করে ছাত্রজনতার সাথে মারামারি, ভাঙচুর ও গাড়িতে অংগ্নিসংযোগের ঘটনায়সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৬ (ঠ) অনুযায়ী চাকরি হতে পদচ্যুতি (ডিসমিসাল) করার সুপারিশ করা হলো। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গতকালকের সিন্ডিকেট সভায় অনুমদিত হয়। এর ফলে এই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী পবিত্র ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে চাকরি হারালেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত হত্যা প্রচেষ্টা, মারামারি, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি প্রাথমিক তদন্ত (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৮ (ক) (২) ধারা মোতাবেক এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যক্রম চলমান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রম আংশিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডকেট সভায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিক হয়েছে তাদের শাস্তি নিশ্চির করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যাদের তদন্ত বাকি আছে তাদের ক্ষেত্রে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের সামনে একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকায় ১৫ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তোরাব মীম, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ রিয়াদ সিদ্দিকী, পেইন্টার নিতীশ রায়, মো. সাইফুল ইসলাম, এমএলএসএস মেহেদী কাজী, সহকারী ড্রেসার মো. শহিদুল ইসলাম, সুইপার সন্দীপ দাস, অফিস সহকারী উজ্জল মোল্যা, ড্রাইভার সুজন বিশ্ব শর্মা, এমএলএসএস ফকরুল ইসলাম জনি, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টারের কাস্টমার কেয়ার এটেনডেন্ট রুবেল রানা, এমএলএসএস শাহাদাত, সিনিয়র স্টাফ নার্স শবনম নূরানী, এমএলএসএস মো. আনোয়ার হোসেন এবং এমএলএসএস মো. মুন্না আহমেদ।

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার সাথে মারামারিতে জড়িত আরও ২৩ চিকিৎসক এবং শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার সাথে সরাসরি মারামারি, ভাঙচুর এবং গাড়িতে আগুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সেই ১৯ জন হলেন, ইউরোলজি বিভাগের প্রখ্যাত কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আহসান হাবিব, ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুভাস কান্তি দে, অনকোলজি বিভাগের মেডকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ জাহান শামস, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নূর-ই-এলাহী, অটোল্যারিংগোলজি-নাক কান গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসানুল হক, শিশু নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অশীষ কুমার সরকার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহনেওয়াজ বারী, কার্ডিওলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. অমল কুমার ঘোষ এবং রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাঈদুল হাসান, অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের গবেষণা সহকারী/ স্ববেতনে কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ তারিকুল মতিন, ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমর ফারুক এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ২৩ জনের মধ্যে চার জনের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

এক শিক্ষকের অভিযোগে আরেক শিক্ষককে অপসারণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসিমা আখতার অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদের মেয়াদটিকে সহয়োগী অধ্যাপক পদের সমপর্যায়ের উল্লেখ করে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর একটি আবেদন করেন। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, অধ্যাদেশ ও প্রবিধানের দক্ষ ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ধারা ৫ এর উপধারা (ছ) মোতাবেক ডা. এএইএম জহুরুল হককে ধারা-৬ এর (ট) অনুযায়ী চাকরি থেকে অপসারণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১০ চিকিৎসক-কর্মকর্তাকে শাস্তি : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মকর্তা বিরুদ্ধে হৈ-হট্টগোল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভার বাধাগ্রস্ত করার অভিযযোগ প্রমানিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্ধবিরোধী কার্যকলাপ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫ (ঘ) ধারায় অভিযুক্ত করে ৬ (ক) (খ) ধারায় তাদের সতর্কিকরণ ও তিরস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন-অর্থোডনটিকস বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. এ কে এম কবির আহমেদ, নেফ্রোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহরিয়ার শামস লস্কর, ইউরোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ এরশাদ আহসান, চর্ম ও যৌন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবু নাসের, ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের গবেষণা সহকারী ডা. এ কে আল মিরাজ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. জিয়াউদ্দিন মাহমুদ দিনার, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড অ্যান্ডোডনটিকস বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রিয়াদুল জান্নাত, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সালাম, নিউরোলজি বিভাগের গবেষণা সহকারী ডা. এ বি এস এম সিরাজুল হক এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইয়াহিয়া খান।

বৈষম্যের শিকার কর্মচারীদের ভুতাপেক্ষা সুবিধা : বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যের শিকার ও বঞ্চিত ১৬ গ্রেডের অফিস সহকারী/ সমমান, ১৪ গ্রেডের উচ্চমান সহকারী ও ১৬ গ্রেডের টেলিফোন অপারেটরদের মধ্যে ২২ কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় ভুতাপেক্ষাভাবে সব আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

চাকরি হারাচ্ছেন ৩৯ চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী

আপলোড সময় : ১১:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, ছাত্রজনতার সঙ্গে মারামারিতে জড়িত থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিভঙ্গ করে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগে ৩৯ চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারাচ্ছেন। একই অভিযোগে আরও ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মচারীকে তিরস্কার করে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯৬ কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণ এবং ২২ কর্মচারীর পদোন্নতি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ এর ৮(ক)(২) ধারায় গঠিত কমিটির আংশিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন হয়।

অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটি সুপারিশে উল্লেখ করেন অভিযুক্ত ১৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫ এর (ঘ, ঝ, ট) ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই অধ্যাদেশের ৬ (ঠ) অনুযায়ী চাকরি হতে পদচ্যুতি (ডিসমিসাল) করার সুপারিশ করা হলো। এছাড়া ২৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৯ জনের বিষয়ে কমিটি উল্লেখ করে ছাত্রজনতার সাথে মারামারি, ভাঙচুর ও গাড়িতে অংগ্নিসংযোগের ঘটনায়সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৬ (ঠ) অনুযায়ী চাকরি হতে পদচ্যুতি (ডিসমিসাল) করার সুপারিশ করা হলো। তদন্ত কমিটির এই সুপারিশ গতকালকের সিন্ডিকেট সভায় অনুমদিত হয়। এর ফলে এই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী পবিত্র ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে চাকরি হারালেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত হত্যা প্রচেষ্টা, মারামারি, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি প্রাথমিক তদন্ত (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৮ (ক) (২) ধারা মোতাবেক এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কার্যক্রম চলমান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রম আংশিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডকেট সভায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিক হয়েছে তাদের শাস্তি নিশ্চির করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যাদের তদন্ত বাকি আছে তাদের ক্ষেত্রে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের সামনে একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকায় ১৫ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তোরাব মীম, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ রিয়াদ সিদ্দিকী, পেইন্টার নিতীশ রায়, মো. সাইফুল ইসলাম, এমএলএসএস মেহেদী কাজী, সহকারী ড্রেসার মো. শহিদুল ইসলাম, সুইপার সন্দীপ দাস, অফিস সহকারী উজ্জল মোল্যা, ড্রাইভার সুজন বিশ্ব শর্মা, এমএলএসএস ফকরুল ইসলাম জনি, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টারের কাস্টমার কেয়ার এটেনডেন্ট রুবেল রানা, এমএলএসএস শাহাদাত, সিনিয়র স্টাফ নার্স শবনম নূরানী, এমএলএসএস মো. আনোয়ার হোসেন এবং এমএলএসএস মো. মুন্না আহমেদ।

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার সাথে মারামারিতে জড়িত আরও ২৩ চিকিৎসক এবং শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার সাথে সরাসরি মারামারি, ভাঙচুর এবং গাড়িতে আগুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সেই ১৯ জন হলেন, ইউরোলজি বিভাগের প্রখ্যাত কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আহসান হাবিব, ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুভাস কান্তি দে, অনকোলজি বিভাগের মেডকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ জাহান শামস, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নূর-ই-এলাহী, অটোল্যারিংগোলজি-নাক কান গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসানুল হক, শিশু নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম তারিকুল ইসলাম, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অশীষ কুমার সরকার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহনেওয়াজ বারী, কার্ডিওলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. অমল কুমার ঘোষ এবং রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাঈদুল হাসান, অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের গবেষণা সহকারী/ স্ববেতনে কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ তারিকুল মতিন, ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমর ফারুক এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ২৩ জনের মধ্যে চার জনের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

এক শিক্ষকের অভিযোগে আরেক শিক্ষককে অপসারণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসিমা আখতার অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এএইচএম জহুরুল হকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদের মেয়াদটিকে সহয়োগী অধ্যাপক পদের সমপর্যায়ের উল্লেখ করে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর একটি আবেদন করেন। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, সংবিধি, অধ্যাদেশ ও প্রবিধানের দক্ষ ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ ধারা ৫ এর উপধারা (ছ) মোতাবেক ডা. এএইএম জহুরুল হককে ধারা-৬ এর (ট) অনুযায়ী চাকরি থেকে অপসারণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১০ চিকিৎসক-কর্মকর্তাকে শাস্তি : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মকর্তা বিরুদ্ধে হৈ-হট্টগোল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভার বাধাগ্রস্ত করার অভিযযোগ প্রমানিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৯ চিকিৎসক ও এক কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্ধবিরোধী কার্যকলাপ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫ (ঘ) ধারায় অভিযুক্ত করে ৬ (ক) (খ) ধারায় তাদের সতর্কিকরণ ও তিরস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন-অর্থোডনটিকস বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. এ কে এম কবির আহমেদ, নেফ্রোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহরিয়ার শামস লস্কর, ইউরোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ এরশাদ আহসান, চর্ম ও যৌন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবু নাসের, ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের গবেষণা সহকারী ডা. এ কে আল মিরাজ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. জিয়াউদ্দিন মাহমুদ দিনার, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড অ্যান্ডোডনটিকস বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রিয়াদুল জান্নাত, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সালাম, নিউরোলজি বিভাগের গবেষণা সহকারী ডা. এ বি এস এম সিরাজুল হক এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইয়াহিয়া খান।

বৈষম্যের শিকার কর্মচারীদের ভুতাপেক্ষা সুবিধা : বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যের শিকার ও বঞ্চিত ১৬ গ্রেডের অফিস সহকারী/ সমমান, ১৪ গ্রেডের উচ্চমান সহকারী ও ১৬ গ্রেডের টেলিফোন অপারেটরদের মধ্যে ২২ কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় ভুতাপেক্ষাভাবে সব আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়।