
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আয় বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, এসএমই খাতে বিনিয়োগ ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা এই খাতের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
এসএমই খাতে বিনিয়োগের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসএমই খাত জাতীয় অর্থনীতির প্রায় ২৫-৩০% অবদান রাখে। এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও মূলধন ও ঋণের সংকটের কারণে অনেক উদ্যোগ ব্যাহত হয়। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া কঠিন, ফলে এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সঞ্চয় কিংবা উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হয়।
অর্থায়নের সংকট
১. ব্যাংক ঋণের সীমাবদ্ধতা:
উচ্চ সুদের হার
জামানত সংক্রান্ত কঠোর নীতি
ব্যাংকের দীর্ঘ প্রসেসিং সময়
২. বিকল্প অর্থায়নের অভাব:
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইকুইটির সীমিত সুযোগ
স্টার্টআপ ও এসএমই-র জন্য বন্ড মার্কেটের সীমিত সুযোগ
৩. তথ্যের স্বচ্ছতার অভাব:
উদ্যোক্তাদের আর্থিক নথির দুর্বলতা
ব্যবসা পরিকল্পনার অভাব
সংকটের সমাধানের উপায়
১. সহজ শর্তে ঋণ প্রদান:
জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা
সুদের হার কমানো
ডিজিটাল ঋণ প্রদান ব্যবস্থার উন্নয়ন
২. বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা:
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো
সরকারি অনুদান ও সহযোগিতামূলক প্রকল্প চালু করা
ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের প্রসার ঘটানো
৩. উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি:
আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা পরিকল্পনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা
৪. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ:
নীতিগত সহায়তা বৃদ্ধি করা
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান
এসএমই খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য কর সুবিধা প্রদান
পরিশেষে,এসএমই খাতের অর্থায়ন ও বিনিয়োগ সংকট নিরসনে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সহজ ঋণপ্রাপ্তি, বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এসএমই খাতকে আরও গতিশীল ও টেকসই করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।