ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

এবারই প্রথম দুর্গাপূজায় তুমি নেই বাবা

  • বিনোদন ডেস্ক
  • আপলোড সময় : ১০:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
  • ২০৭ বার দেখা হয়েছে।

চঞ্চল চৌধুরী ও তার বাবা গোবিন্দ চৌধুরী

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে সময় দিতেই বেশি পছন্দ করেন এই অভিনেতা। বিশেষ করে বাবা-মাকে। তবে এখন শুধু মা-কে ঘিরেই তার সবকিছু। কারণ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতার বাবা গোবিন্দ চৌধুরী।আর মাত্র কয়েক দিন পরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে দুর্গাপূজাকে ঘিরে চলছে নানান আয়োজন। প্রতি বছর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে পূজায় বেশ আনন্দেই সময় কাটান চঞ্চল। তবে এবারই প্রথম দুর্গাপূজায় নেই অভিনেতার বাবা। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল।

শনিবার (২১ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বাবার একটি ছবি শেয়ার করে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন চঞ্চল।

 

চঞ্চল চৌধুরীর বাবা গোবিন্দ চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরীর বাবা গোবিন্দ চৌধুরী

 

পাঠকদের সুবিধার জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

 

শুরু হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসব। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে এই দূর্গা পূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত, কি যে এক আনন্দোৎসব।

 

সারা বছর ধরে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব। শরতের কাঁশফুলে সাদা হয়ে থাকত পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করত নতুন পোশাক পাবার আশায়। সারা বছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দারিদ্রতার ভেতরেও পূঁজার সময় বাবা সাধ্যমত চেষ্টা করতেন সবগুলো ভাই বোনকে নতুন কাপড় কিনে দেবার।

 

সারা বছরে একমাত্র এই পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম কাপড় কাটা হলো কিনা, শেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য। আহারে….কত কত অপেক্ষা। যেদিন শার্টটা হাতে পেতাম,সে যে কি আনন্দ।

 

নতুন কাপড়ের আনন্দ,পূজার আনন্দ॥নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। আস্তে আস্তে বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে সমর্থ পরিবারে, আমরা ভাইয়েরাও লেখা পড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা মায়ের নিদারুন কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয় স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমতো। এখন আমার ঘর ভর্তি কত কত নতুন পোশাক। পোশাকগুলো পরার সময়ও পাইনা ঠিকমত।

 

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

 

এ ছাড়া প্রতিবছর পূজায় এখন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাইনা, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে। যে গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর। কিছুটা সামর্থ হবার পর থেকেই, প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস।

 

এবারও নিজে হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরী করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে…বাবা তো নেই….চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা মাকে ছাড়া কোনো দূর্গাপূজা পালন করিনি।

 

এবারই প্রথম বাবা নেই…..বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি। বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম….প্রথম যে বছর আমি দূর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবীর ঘ্রানটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেওয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবীতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়? যে ঘ্রাণ এখনও আমার নাকে, মুখে, সারা শরীরে লেপ্টে আছে…..!

 

সেই আমার বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরীতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ঐরকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো॥ যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা।

 

এবার পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ীর হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি তো বাবা? সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা….মা দূর্গা সকলের মঙ্গল করুন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

এবারই প্রথম দুর্গাপূজায় তুমি নেই বাবা

আপলোড সময় : ১০:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে সময় দিতেই বেশি পছন্দ করেন এই অভিনেতা। বিশেষ করে বাবা-মাকে। তবে এখন শুধু মা-কে ঘিরেই তার সবকিছু। কারণ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেতার বাবা গোবিন্দ চৌধুরী।আর মাত্র কয়েক দিন পরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে দুর্গাপূজাকে ঘিরে চলছে নানান আয়োজন। প্রতি বছর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে পূজায় বেশ আনন্দেই সময় কাটান চঞ্চল। তবে এবারই প্রথম দুর্গাপূজায় নেই অভিনেতার বাবা। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল।

শনিবার (২১ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বাবার একটি ছবি শেয়ার করে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন চঞ্চল।

 

চঞ্চল চৌধুরীর বাবা গোবিন্দ চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরীর বাবা গোবিন্দ চৌধুরী

 

পাঠকদের সুবিধার জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

 

শুরু হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসব। ছোটবেলা থেকেই আমাদের গ্রামে এই দূর্গা পূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত, কি যে এক আনন্দোৎসব।

 

সারা বছর ধরে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব। শরতের কাঁশফুলে সাদা হয়ে থাকত পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করত নতুন পোশাক পাবার আশায়। সারা বছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দারিদ্রতার ভেতরেও পূঁজার সময় বাবা সাধ্যমত চেষ্টা করতেন সবগুলো ভাই বোনকে নতুন কাপড় কিনে দেবার।

 

সারা বছরে একমাত্র এই পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজে সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম কাপড় কাটা হলো কিনা, শেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখবার জন্য। আহারে….কত কত অপেক্ষা। যেদিন শার্টটা হাতে পেতাম,সে যে কি আনন্দ।

 

নতুন কাপড়ের আনন্দ,পূজার আনন্দ॥নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। আস্তে আস্তে বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে সমর্থ পরিবারে, আমরা ভাইয়েরাও লেখা পড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা মায়ের নিদারুন কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয় স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমতো। এখন আমার ঘর ভর্তি কত কত নতুন পোশাক। পোশাকগুলো পরার সময়ও পাইনা ঠিকমত।

 

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী

 

এ ছাড়া প্রতিবছর পূজায় এখন আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাইনা, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে। যে গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর। কিছুটা সামর্থ হবার পর থেকেই, প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস।

 

এবারও নিজে হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার লিস্ট তৈরী করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে…বাবা তো নেই….চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা মাকে ছাড়া কোনো দূর্গাপূজা পালন করিনি।

 

এবারই প্রথম বাবা নেই…..বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি। বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম….প্রথম যে বছর আমি দূর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবীর ঘ্রানটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিল বাবা? শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেওয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবীতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়? যে ঘ্রাণ এখনও আমার নাকে, মুখে, সারা শরীরে লেপ্টে আছে…..!

 

সেই আমার বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরীতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ঐরকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো॥ যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা।

 

এবার পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ীর হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি তো বাবা? সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা….মা দূর্গা সকলের মঙ্গল করুন।